বৈশাখী মেলা দেখার দিনলিপি

১ বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
রাত ১০ টা
প্রতিটি দিনই আমার কাছে নতুন, সম্ভাবনাময় এবং জীবন গঠনের নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠার আহ্বান। তবে আজকের দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিন্ন। স্বাগত জানিয়েছি ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে, নতুন বছরের প্রথম দিনের প্রথম প্রভাতে:

’ বছর মিলেছে নতুন বছরে, ঘন্টা বেজেছে মনের দুয়ারে
নব-জীবনের বার্তা হাতে-নববর্ষ এসেছে আমাদের দ্বারে
চলো, বরণ করি তারে-নবপ্রভাতের বন্দনা-গীতে;
অমলিন প্রেম শাশ্বত ভালবাসা-যতটুকু হৃদয়ে আছে
বিলিয়ে দিই উদার প্রাণে, সকলের তরে-বাংলাদেশে- বিশ্বপ্রাণে।’

দিনলিপির প্রথম অংশ

দিনের পরিকল্পনা করতে গিয়ে গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। তবুও খুব ভোরে উঠে ছিলাম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী। বাসার পরিকল্পনার সঙ্গে আমার পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তদপুরি বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাব এই ছিল পরিকল্পনা। আমি আমার দিনলিপিতে সেটি যোগ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু বাবাকে জানিয়েছিলাম কলেজের অনুষ্ঠানের কথা। বাবা বললেন অবশ্যই যাবে, তবে দুপুরের মধ্যে বাসায় ফিরে আসতে হবে।

দিনলিপির দ্বিতীয় অংশ

মজার ঘটনাটি ঘটলো সকালে। বাবা সবাইকে ডেকে ঘুম থেকে জাগালেন এবং হাত মুখ ধুয়ে প্রার্থনা শেষে ড্রয়িং রুমে আসতে বললেন। আমরা সবাই একসঙ্গে এসে বসার আর সুযোগ পেলাম না, বাবা আমাদের নতুন জামা কাপড় উপহার দিলেন। আমি বাবা ও আমাকে সালাম জানিয়ে আশীর্বাদ নিলাম। মনটা খুশিতে ভরে গেল। ভাবলাম বিধাতা যেন বছরের প্রতিটা দিন এরকম বাবা-মায়ের আশীর্বাদ অর্জন করার সুযোগ দেয়। সবাই যেন এরকম হাসিখুশিতে দিন কাটাতে পারি। মুহূর্তে আরো অনেক কিছু ভেবে ফেললাম। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখেছি বাবা একজন আদর্শ মানুষ, দেশ প্রেমিক এবং মনেপ্রাণে বাঙালি।

পরিবারের সবাই নাস্তার টেবিলে বসে মিষ্টি মুখ করে নাস্তা সেরে নিয়েছিলাম। তারপরেই কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের কলেজ মাঠে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম। নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে আমরা ’মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ যোগদান করলাম। তারপরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হলো। আমি বন্ধু-বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

দিন লিপির তৃতীয় অংশ

বাসায় ফিরে দেখি আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। পরিবারের সবাই মিলে বের হলাম বৈশাখী মেলার উদ্দেশ্যে। মেলায় এত ভিড় যে পা ফেলার জায়গাটুকু নেই। সারি সারি দোকানপাটে হরেক রকমের জিনিসের পসরা। এসব দোকানে খেলনা গাড়ি, পুতুল, চুরির দোকান, বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য; যেমন: চিড়া, মুড়ি, খই, বাতাসা ইত্যাদি; বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ ছিল। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। মেলায় বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল। লোক গায়ক ও লোক নর্তকদের উপস্থিতি ও তাদের নাচ গানে মেলা ছিল আনন্দমুখর। এছাড়া শিশু কিশোরদের আকর্ষণের জন্য ছিল বায়োস্কোপ। শিশু কিশোররা বায়োস্কোপ ও নাগরদোলার আশেপাশে ভিড় জমিয়েছিল। অনেকে নাগর দোলায় চড়ে মজা করছিল। বাবা-মা আমাদের হাত ধরে ধরে একটু কম ভিড়ের দোকানগুলো থেকে নানান প্রকার জিনিসপত্র কেনাকাটা করলেন। মেলা শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত দশটা বেজে গিয়েছিল। অবসন্ন ক্লান্ত দেহ নিয়ে আমি লিখে নিলাম আমার জীবনের স্মরণীয় একটি দিনলিপি। মনের মধ্যে গুণগুন করে গাইছিলাম নববর্ষের গান। কবিতাটি আজকের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই বরং আনন্দ পাচ্ছি যে দিল্লীতে কবিতাটি লিখতে পেরেছি। কবিতাটি হলো-

আজকে সবাই দীন-হীন ভুলে/মুক্ত-প্রাণে মিলাবে, মিলিবে সবে
অকৃপণ মনে বিলাবে কেবল/ভুবনের প্রেম আনন্দ উচ্ছ্বাসে।
হে বৈশাখ তুমি প্রতিদিন এসো/মনের দুয়ারে কড়া নেড়ে বলো-
’ শাশ্বত প্রেমে আমি. তুমি সে/নিত্য জীবন আনন্দে ভরে উঠুক।’
হে বৈশাখ তুমি প্রতিক্ষনে এসো/রুদ্র-খর-তাপে জরাজীর্ণকে বল-
জেগেছে কি? জেগে ওঠো বাঙালি-/ বাংলা আমার, বাংলাদেশের প্রাণ।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমাদের সাইটটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ। আজকের এই পোস্টটিতে বৈশাখী মেলা দেখার দিনলিপি সম্পর্কে তুলে ধরেছিলাম। আমরা এই দিনলিপি, অনুচ্ছেদ, প্রবন্ধ রচনা ইত্যাদি বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক থেকে সংগ্রহ করে থাকি। আশা করি এটি আপনার স্কুল কিংবা কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষায় কাজে লাগবে। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এবং সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের এই পোস্ট করলাম।