ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। আমাদের দৈনন্দিন লেনদেনের ক্ষেত্রে সকলেই আমরা ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে থাকি এবং নানা প্রয়োজনে ব্যাংকে জমাকিত টাকা উত্তোলন করার জন্য চেকের মাধ্যমে ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা উত্তোলন করতে হয়।

অনেক সময় দেখা যায় যে ব্যাংকে কোন কারণে টাকা থাকে না, সে ক্ষেত্রে যদি আপনার কাছে একটি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে খুব সহজে আপনি অনলাইন থেকে বা শপিং কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে নিতে পারবেন। সেজন্য আজকের এই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা বা ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে। চলুন তাহলে নিচে থেকে জেনে নেওয়া যাক।

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু স্থায়ী যোগ্যতা পূরণ করতে হবে, আপনি তবেই সে প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ডের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। আর এ সকল ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা নিয়মাবলী অনুসরণ করলে আপনি যে কোন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠবেন। নিচে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

1. ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই ১৮ বছরের উপরে হতে হবে।

2. উক্ত ব্যক্তির বাৎসরিকায়ের পরিমাণ টি লক্ষ টাকা অধিক হতে হবে।

3. ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তি কে ব্যাংকের সাথে কমপক্ষে এক বছরের লেনদেন থাকতে হবে।

4. ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।

5. ব্যাংক একাউন্ট এ লেনদেন থাকতে হবে এবং একাউন্টে টাকা থাকতে হবে।

6. ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য অবশ্যই ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারকে চাকরি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা আবশ্যক। যা থেকে মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা হতে হবে তবে আয়ের সর্বনিম্ন সীমা ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে।

7. ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য একজন জমানতকারী থাকতে হবে।

Read More 

Home Insurance Affordability Actuaries Institute

ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে কি কি লাগে

অনলাইনে আপনি আবেদন করতে পারবেন বা সরাসরি একটি ব্যাংক শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে পারবেন, যা বিষয়টা যে আরও সহজ এবং আরো সুবিধা জনক করে তোলে। ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে প্রয়োজনীয় যে সকল ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা নিচে তুলে ধরা হলো।

1. পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
2. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
3. জাতীয় পরিচয় পত্র।
4. ক্রেডিট কার্ড আবেদনের ফরম।
5. আপনার মাসিক বেতনের স্টেটমেন্ট।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে এবং অসুবিধা রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

দ্রুত লেনদেন: যদি আপনি অনলাইন থেকে দামি কোন প্রোডাক্ট কিনতে চান এক্ষেত্রে যদি আপনার কাছে টাকা না থাকে, তাহলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন থেকে পণ্যটি কিনে ফেলতে পারবেন। আপনি এর মাধ্যমে পণ্যটি ক্রয় করে কয়েক মাস ধরে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এতে করে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ খুব বেশি মনে হয় না। তবে মনে রাখবেন ক্রেডিট কার্ডের মেয়াদ অনুযায়ী সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক টাইমে ঋণ পরিশোধ না করলে আপনাকে জরিমানা দিতে হতে পারে।

সুরক্ষা : ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনেক সুরক্ষা রয়েছে। মনে করুন আপনার কার্ডটি চুরি হয়ে গেল এক্ষেত্রে চোর আপনার কার্ডের টাকা তুলে ফেলল এক্ষেত্রে কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক যথাযথ প্রমাণ স্বরূপে আপনার কার্ডের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।

ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড রয়েছে বিশেষ করে দেশের বাইরে শূন্য শতাংশ সুদের ঋণ দেয়। তাই এসবের কারণে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। যা বেশ সুবিধা জনক তাছাড়া ক্রেডিট কার্ড থেকে যে ঋণ পাওয়া  যায় তা পরিশোধ করতে দীর্ঘ সময় পাওয়া যায় এক্ষেত্রে এটা একটা সুবিধা জনক।

ক্রেডিট কার্ড রিওয়ার্ড পয়েন্ট :বর্তমানে নগদ বা অনলাইন ব্যাংকিং এর পরিবর্তে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্থ প্রদান করলে প্রায় আপনি ভিন্ন হারে বোনাস পয়েন্ট অর্জন করেন। এই বোনাস পয়েন্টের হার কার্ড বা লেনদেনের প্রকারের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। যখন অনেকগুলো পয়েন্ট জমা হয়, তখন সেগুলি বিভিন্ন উপহার কার্ড কেনা , সিম বা টিকেট কিনা, মোবাইল রিচার্জ এবং এমনকি কার্ডের বিল পরিশোধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভ্রমণ করার সময় সুবিধা : নগদ বিহীন ভ্রমণ এবং উপরে উল্লেখিত ভ্রমণ বীমা সুবিধাগুলো ছাড়াও বেশ কয়েকটি কার্ড বিনামূল্যে রেল এবং বিমানবন্দর লাউঞ্জ এক্সেস, অগ্রাধিকার চেক ইন, অতিরিক্ত ব্যাগেজ ভাতা, বিমান এবং হোটেল ছাড়,  কার্ড ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য এবং সাশ্রয়ী করে তোলে। বারবার ভ্রমণের জন্য বিশেষ ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড ভ্রমণ কেনাকাটায় অতিরিক্ত পুরস্কার পয়েন্ট অর্জন করে যা বিনামূল্য ফ্লাইট, হোটেল বুকিং বা অন্যান্য ভ্রমণ সম্পর্কিত সুবিধার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অসুবিধা

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের অসুবিধা নিম্নে আলোচনা করা হয়।

1. বাজে অতিক্রম করেও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। ফলে সামর্থের বাইরে খরচ করে ফেলার ঝুঁকি থাকে। বেহিসাবি খরচ মানেই অতিরিক্ত ঋণের বোঝা।

2. সময়মতো ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করলে সুদ বাড়তে থাকে চক্রাকারে। সুদ বাড়তে বাড়তে অনেক সময় এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে আসলের টাকা পরিশোধ করাই কঠিন হয়ে পড়ে।

3. ইনস্টলমেন্ট দেরিতে দিলে ক্রেডিট স্কোর কমতে থাকে। হলে অনেক অফার পাওয়া যায় না।

4. ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার পর এর বিপরীতে ঋণ না নিলে বা ব্যবহার না করলেও প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হয়। এ ছাড়া দেরিতে অর্থ পরিশোধে ও ব্যালেন্স ট্রান্সফার এ অতিরিক্ত ফি দিতে হয়।

ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ডের পার্থক্য

  1. . ক্রেডিট কার্ড নেওয়া হয় টাকা ধার করে পরে পরিশোধ করার জন্য। এই কার্ড ব্যবহার করে প্রতি মাসে কিস্তি শোধ করা যায়।
  2. . ডেবিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। প্রিপেইড কার্ডে যত টাকা ভরানো হয়, ততটাই খরচ করা যায়। অতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কা থাকে না।
  3. . অনেক প্রিপেইড কার্ড শুধু একবার কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করা যায়। সরাসরি ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে প্রিপেইড কার্ড এর কোন সম্পর্ক নেই।

তবে প্রিপেইড ও ক্রেডিট কার্ড গায়ে সাধারণত একই কার্ড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানের লোগো থাকে। যেমন- ভিসা, মাস্টার কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ডিসকভার লেখা থাকে।

ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন পদ্ধতি

বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ক্রেডিট কার্ড এর আবেদন ফরম দেওয়া থাকে। সেখান থেকে ডাউনলোড করে যাবতীয় তথ্য সরবরাহ পূর্বক সঠিকভাবে ফরমটি পূরণ করে ব্যাংকের ইমেইলে পাঠানো যেতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, লংকা বাংলা, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক এর নিজস্ব অনলাইন আবেদন গ্রহণ সিস্টেম আছে। আবেদন ফরম পূরণের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ ভালো করে জেনে নিতে হবে।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের হট লাইনে যোগাযোগ করে সঠিক নির্দেশনা  নিয়ে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করা যেতে পারে। আবেদনের সাথে সকল প্রয়োজনে কাগজপত্র স্ক্যান করে ইমেইলে সংযুক্ত করে দিতে হবে। তবে অনলাইন বা অফলাইন যে মাধ্যমে আবেদন হোক না কেন, ক্রেডিট কার্ডটি চূড়ান্তভাবে হাতে আসতে কমপক্ষে ১০ কার্য দিবস সময় লাগতে পারে। কোন কোন ব্যাংকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।