বাঙালির সংস্কৃতি, বাঙালির উৎসব মানেই বাঙালির আবেগ। তেমনি বাঙালির আবেগঘন একটি দিন হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখ, এই বৈশাখ মাসের ১ তারিখ সারা বাংলা জুড়ে নববর্ষ পালন করা হয়। নববর্ষের দিনটি বিশ্বের সকল বাংলাভাষীরা চমৎকারভাবে উপভোগ করে। পহেলা বৈশাখে দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়, এই মেলাকে বলা হয় বৈশাখী মেলা।
এবারের পহেলা বৈশাখে আপনি যদি ফেসবুকে বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা, বক্তব্য দিতে হয়। তাই আমরা আজকের এই পোস্টে কবিতা ও বক্তব্য তুলে ধরবো। আপনি চাইলে আমাদের পোস্ট থেকে স্ট্যাটাস, উক্তি, সংলাপ, কবিতা, বক্তব্য সংগ্রহ করতে পারবেন। তাই পহেলা বৈশাখ নিয়ে লেখা আজকের এই পোস্টটি ভালোভাবে দেখে নিন।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে স্ট্যাটাস
১. বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ আমাদের মাঝে এসে গেছে, শুভ নববর্ষ।
২. বছর ঘুরে এলো আরেক প্রভাতী ফিরে এলো সুরের মঞ্জুরী পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি মেলায় যাইরে, মেলায় যাইরে বাসন্তী রং শাড়ি পরে ললনারা হেটে যায়।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩. আনন্দে আতঙ্কে নিশি নন্দনে উল্লাসে গরজিয়া মত্ত হাহা রবে ঝার সঞ্জীব বাধ উন্মাদিনী কালবৈশাখীর নৃত্য হোক তবে।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪. পুরনো গ্লানি দূর করে, এসেছে নতুন সুরে, পহেলা বৈশাখ আমাদের দ্বারে। হ্যাপি পহেলা বৈশাখ।
৫. হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ! ধুলাই ধূসর রুক্ষ উড্ডিন পিঙ্গল জটাজাল, তপক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল কারে দাও ডাক হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ !
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৬. এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ তাপসনিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদুরে মিলাক। মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৭. বৈশাখ হে, মৌনি তাপস, কোন্ অতলের বাণী এমন কোথায় খুঁজে পেলে। তথ্য ভালের দীপ্তি ঢাকি মন্থর মেঘখানি এলো গভীর ছায়া ফেলে।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৮. বাঙালির ঐতিহ্য-আনন্দের দিন, বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে উক্তি
১. পৌষের কুয়া বৈশাখের ফল। য’দ্দিন কুয়া তদ্দিন জল। শনিতে সাত মঙ্গলে/(বুধ) তিন। আর সব দিন দিন।
-ক্ষণা
২. বৈশাখের প্রথম জলে, আশুধান দ্বিগুণ ফলে।
-ক্ষণা
৩. শুনরে বেটা চাষার পো, বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে হলুদ রো। আষাঢ় শাওনে নিড়িয়ে মাটি, ভাদরে নিড়িয়ে করবে খাটি। হলুদ রোলে অপর কালে, সব চেষ্টা যায় বিফলে।
-ক্ষণা
৪. মাঘে মুখী, ফাল্গুনে চুখি, চৈতে লতা, বৈশাখে পাতা।
-ক্ষণা
৫. চৈত্রেতে থরথর বৈশাখেতে ঝড় পাথর জ্যৈষ্ঠেতে তারা ফুটে তবে জানবে বর্ষা বটে।
-ক্ষণা
৬. চৈত্রে দিয়া মাটি বৈশাখে কর পরিপাটি।
-ক্ষণা
৭. চৈত্রে চালিতা, বৈশাখে নালিতা, আষাঢ়ে…. ভাদ্রে তালের পিঠা। আর্শ্বিনে ওল, কার্তিকে কৈয়ের ঝুল।
-ক্ষণা
৮. চৈতে গিমা তিতা, বৈশাখে নালিতা মিঠা, জৈষ্ঠে অমৃতফল, আষাঢ়ে খৈ, শায়নে দৈ। ভাদরে তালের পিঠা, আশ্বিনে শশা মিঠা, কার্তিকে খৈলসার ঝোল , অগ্রাণে ওল। পৌষে কাঞ্ছি, মাঘে তেল, ফাল্গুনে পাকা বেল।
-ক্ষণা
পহেলা বৈশাখ নিয়ে সংলাপ
স্বামী স্ত্রীর মাঝে পহেলা বৈশাখ নিয়ে সংলাপ
স্ত্রীঃ আজ এত বাজার করে নিয়ে এলে যে, কাহিনী কি তোমার? আর তোমাকে অনেক খুশি খুশি লাগছে, ব্যাপারটা কি একটু বলেন তো আমায়।
স্বামীঃ আরে গিন্নি, তুমি কি বাংলা পঞ্জিকার খেয়াল রাখো না নাকি? এত বেখেয়ালি হলে চলবে? কাল যে পহেলা বৈশাখ, তোমারে এ কথা স্মরণে নেই?
স্ত্রীঃ ও আচ্ছা ! আমার তো একদমই মনে ছিল না। যাই হোক, ব্যাগ ভর্তি কি নিয়ে এলে এবার দেখাও দেখি।
স্বামীঃ আজ একটু স্পেশাল বাজার করে নিয়ে এলাম, কারণ কাল তো পহেলা বৈশাখ। ইলিশ মাছ আনতে আমি কিন্তু একদমই ভুলিনি।
স্ত্রীঃ তা বেশ ভালো কথা, কিন্তু তোমার হাতে যে আরো কিছু দেখতে পারছি। ওইগুলো কি দেখাও দেখি একটু্।
স্বামীঃ কাল তো বছরের প্রথম দিন, তাই তোমার জন্য নতুন শাড়ি নিয়ে এসেছি। শুধু শাড়ি নয় গিন্নি, এই পোটলার ভিতরে আরো অনেক কিছু আছে।
স্ত্রীঃ তুমি সত্যিই পারো বটে, এখনো কি আমি বাচ্চা মানুষ নাকি, এত কিছুর কি দরকার ছিল?
স্বামীঃ দরকার তো আছেই বৈকি। একটিমাত্র বউ কিনা আমার। আর পহেলা বৈশাখ বলে কথা, তাই তোমার জন্য আরো সাজ সজ্জার সরঞ্জাম নিয়ে এসেছি।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবিতা
চৈত্রকে বিদায় জানিয়ে
এসেছে পহেলা বৈশাখ
সকল জরাজীর্ণ অতীতকে
মুছে দিবে পহেলা বৈশাখে
ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
বৈশাখের প্রচন্ড ঝড়ে
কাপবে সবার বুক
প্রতিটি ঝড়ের রাত্রিতে
চাই তোমাকে পাশে
তুমি যদি থাকতে চাও
রাখবো ভালোবেসে
আমার মত তুমিও যদি
ঝড় দেখে পাও ভয়
জড়িয়ে ধরে থেকো আমায়
থাকবে না কোন ভয়
ঝড়ের দিনে তোমায় নিয়ে
আম কুড়াতে যাব
চুলার উপর ভাত বসিয়ে
মুড়ি মাখিয়ে খাব
^_____^^_____^^_____^^_____^^_____^
পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য
প্রিয় সুধী, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অত্র এলাকার যুব সমাজ কর্তৃক আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, আরো উপস্থিত আছেন এলাকার শ্রদ্ধেয় জনসাধারণ সবাইকে জানাই আমার সালাম ও শুভেচ্ছা আসসালামুয়ালাইকুম। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জানাই নমস্কার। আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আমি অনেক ভালো আছি।
আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সবাইকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা। আজকের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকেই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য এলাকার যুব সমাজ সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছে। যার ফলে আমরা আজকের এই পহেলা বৈশাখের দিনটিকে উপভোগ করতে পারছি। তাই এলাকার যুব সমাজকে জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
আপনারা সবাই জানেন আজকের এই দিনটি বিশ্বের সকল বাংলাভাষীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দময় একটি দিন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশের এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিটি অবহেলায় পালিত হচ্ছে। আগের দিনের মতো আর এত জমজমাট ভাবে প্রতিটি এলাকায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করা হয় না। তবুও আমরা আমাদের এলাকায় এত সুন্দর একটি অনুষ্ঠান পেয়ে খুবই আনন্দিত। তাই আমরা আজকের এই অনুষ্ঠানটি ধৈর্য সহকারে উপভোগ করব এবং আমরা প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ পালন করব সেই প্রত্যয় রেখে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে কিছু কথা
পহেলা বৈশাখ আমাদের মাঝে নতুনত্বের ছোঁয়া নিয়ে আসে। পুরনো সব জরাজীর্ণ ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন যোগায়। বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে অন্ধকার দূর হয়ে আলোর প্রদীপ নিয়ে আসে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের দিনটি প্রতিটি বাঙালির কাছে অত্যন্ত আনন্দময় একটি দিন। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বাংলা নববর্ষের দিনটিতে প্রতিটি মানুষ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায় এবং সবার মাঝে আন্তরিকতা ফিরে আসে। সকলেই এই দিনটি উপভোগ করে।
পহেলা বৈশাখ মানেই সকালে পান্তা ইলিশ খাওয়া। নতুন জামা কাপড় পড়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো। ব্যবসায়ীদের বকেয়া আদায় করার জন্য তারা হালখাতার আয়োজন করে থাকে। এলাকার বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। মেলায় বাচ্চাদের খেলনা, মুড়ি- মুরকি, মিষ্টান্ন খাবার, নাগরদোলা আরো অনেক কিছু পাওয়া যায়। নববর্ষের উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। মোটকথা পহেলা বৈশাখের দিনটি প্রতিটি বাঙালি অত্যন্ত আনন্দের সাথে কাটায়। পহেলা বৈশাখ আমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দময় একটি দিন।
সম্মানিত পাঠক আজকের এই পোস্টটিতে আমরা পহেলা বৈশাখ নিয়ে স্ট্যাটাস, উক্তি, সংলাপ, কবিতা, বক্তব্য ও কিছু কথা তুলে ধরেছি। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আমাদের সাইটটি ভিজিট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পহেলা বৈশাখের দিনটি সবার আনন্দের সাথে কেটে যাক সেই প্রত্যয় রেখে এবং সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের এই পোস্ট শেষ করলাম।