সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরব। আপনারা জানেন নামাজ পড়ার জন্য অজু ওযু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ ওযু ছাড়া নামাজ হয় না। তাই ওযু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আমাদের জেনে রাখা খুব প্রয়োজন। আজকে আমাদের এই পোস্টে ওযু সম্পর্কে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পেয়ে যাবেন। তাই আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি ভালোভাবে পড়ে নিন।

আজকে আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনারা ওযু কাকে বলে, ওযুর ফজিলত, ওযুর ফরজ, ওযুর সুন্নত এবং ওযুর দোয়া জেনে নিতে পারবেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিলে আপনাদের প্রাত্যহিক জীবনে অবশ্যই কাজে লাগবে। কারণ প্রতিদিন আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই ওযু করতে হয়। তাই অজুর সঠিক নিয়ম গুলো আমাদের ভালোভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন। চলুন সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়গুলো জেনে নিই।

ওযু কাকে বলে ?

পাক পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দিয়ে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শরীয়তের নিয়ম কানুন মতো ধোঁয়া এবং মাথা মাসেহ করাকে ওযু বলে। অন্য ভাষায় বলা যায় পবিত্র পানির মাধ্যমে নাপাক শরীর পাক-পবিত্র করার জন্য শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করে পরিষ্কার করাকে ওযু বলে। মূলত আমরা নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যেই ওযু করে থাকি। তবে নামাজ ব্যতীত ইসলামিক বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে ওযু করার প্রয়োজন হয়।

ওযু শুরু করার দোয়া

বাংলা উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্ আলিয়্যিল আজীম। ওয়াল্হামদু লিল্লাহি আ’লা দীনিল্ ইসলাম। আল্ ইসলামু হাক্ কুও ওয়াল কুফ্রু বাত্বিলুন। আল্ ইসলামু নূরুও ওয়াল্ কুফরু জুলমাতুন।
অর্থঃ মহান ও শ্রেষ্ঠ আল্লাহর নামে আরম্ভ করিতেছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি দিন ইসলামের উপর আমাকে রাখিয়াছেন। ইসলাম সত্য এবং কুফুরি মিথ্যা। ইসলাম জ্যোতির্ময় এবং কুফরি অন্ধকারময়।

উপরোক্ত দোয়া পড়িয়া বিসমিল্লাহ বলিয়া ওযু আরম্ভ করিবেন। প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুইবেন। গড়গড়ার সাথে কুলি করিবেন। তারপর সমস্ত মুখ মণ্ডল কানের এক লতি হইতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এর পরে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এরপর মাথা ও ঘাড় মাসেহ করে নিবেন। এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলি একবার ধৌত করা ফরজ। তিনবার ধোয়া সুন্নত।

ওযুর শেষের দোয়া

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ্আ’ল্নী মিনাত্ তাওয়্যাবীনা ওয়াজ্আ’লনী মিনাল্ মুতাত্বাহহিরীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে তাওবাহকারী এবং শুদ্ধ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করো।

আরো দেখুনঃ- ওযু ভঙ্গের কারণ, ওযুর মুস্তাহাব, মাকরুহ্, মাসয়ালা ও আমল

ওযুর ফরজ

ওযুর চারটি কাজ ফরজঃ (১) সমস্ত মুখমন্ডল একবার ধৌত করা। (২) উভয় হাত কনুই পর্যন্ত একবার ধোয়া। (৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা। (৪) উভয় পায়ের টাখনু পর্যন্ত একবার ধোয়া। আপনার ওযু যদি শুদ্ধ করতে চান তাহলে ওযুর এই চারটি ফরজ আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে, অন্যথায় আপনার ওযু হবে না।

ওযুর সুন্নত

ওযুতে মোট ১৭ টি সুন্নতঃ (১) ওযুর নিয়ত করা। (২) বিসমিল্লাহ বলিয়া ওযু শুরু করা। (৩) দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া। (৪) মেসওয়াক করা। (৫) গড়গড়াসহ তিনবার কুলি করা। (৬) তিনবার নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা। (৭) প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করিয়া ধৌত করা। (৮) মুখমন্ডল ধোয়ার সময় আঙ্গুল দিয়া দাড়ি খেলাল করা। (৯) হাত পা ধোয়ার সময় হাত ও পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা।

(১০) একবার সমস্ত মাথা মাসেহ্ করা। (১১) ওযুর অঙ্গ ভালো করিয়া ধৌত করা যাহাতে চুল পরিমান শুকনা না থাকে। (১২) এক অঙ্গ শুকাইয়া যাইবার আগেই অন্য অঙ্গ ধোয়া। (১৩) ওযুর মাঝখানে অযথা বিলম্ব না করা। (১৪) তরতীবের সাথে আগের অঙ্গ আগে এবং পরের অঙ্গ পরে ধোয়া। (১৫) প্রথমে ডান দিক থেকে ধোঁয়া। (১৬) ওযুর পরে কালেমায়ে শাহাদাত পড়া। (১৭) ওযু করিতে যখন অনিচ্ছা হয় তখন খুব ভালো করিয়া ওযু করা।

ওযুর ফজিলত

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন, কেয়ামতের দিন ওযু করার দরুন আমার উম্মতগণের মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকিবে। ইহাতে তাহারা আমার উম্মত বলিয়া পরিচিত হইবে। সুতরাং সর্বদা ওযুর উত্তম সহিত পাক-পবিত্র থাকা অতি উত্তম। কেননা, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।

যেহেতু আল্লাহ তাআলা পাক-পবিত্রতাকে পছন্দ করেন, তাই আমাদের সবাইকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সর্বদা পাক পবিত্র থাকা প্রয়োজন। শুধু নামাজ পড়ার সময় নয়, আমাদের সর্বদাই পাক-পবিত্র থাকতে হবে। পাক পবিত্র থাকলে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। তেমনি অপরদিকে শরীর ও মন ভালো থাকবে। আর পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। পবিত্র থাকলে ঈমান ঠিক থাকে এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় না, ফলে মন মানসিকতা অনেক ভালো থাকে।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমাদের ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরলাম। আজকের এই পোস্টে আমরা ওযু, ওযুর দোয়া, ওযুর ফরজ ,সুন্নত ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা সম্পূর্ণ পোস্টটি ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাই প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা আপনারা উক্ত আলোচনা থেকে যা শিখলেন তা আমল করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক এবং নেক আমল করার তৌফিক দান করুক (আমিন)।