সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের জন্য দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হলে আমাদের ওযু করতে হয়। তাই ওযুর নিয়ম কানুন গুলো আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। কারণ সঠিকভাবে ওযু ব্যতীত নামাজ আদায় হয় না।
আমাদের সবাইকেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার ইবাদত করতে হবে। তাই আমাদের প্রথমেই ভালোভাবে ওযুর সঠিক নিয়ম কানুন গুলো শিখে ওযু করতে হবে। আজকের এই পোস্টটিতে আমরা ওযু ভঙ্গের কারণ, ওযুর মুস্তাহাব, মাকরূহ, ওযুর মাসালা ও ওযু শেষের আমল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যা আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে ওযু করার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। তাই সম্মানিত পাঠাকবৃন্দ চলুন দেখে নেয়া যাক আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
ওযু ভঙ্গের কারণ
আমাদের সবাইকে ওযু করার নিয়ম শিখার পাশাপাশি ওযু ভঙ্গের কারণগুলোও জানতে হবে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় আমরা ওযু করি ঠিকভাবেই, কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওযু ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমাদের নতুন করে আবার ওযু করে নিতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো বা জানি না যে কি কি কারণে ওযু নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা যারা ওযু ভঙ্গের কারণগুলো সম্পর্কে অবগত নই তাদের জন্য ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো নিম্নে দেওয়া হলো।
ওযু ভঙ্গের সাতটি কারণ হলো- (১) প্রস্রাব পায়খানা করা। (২) প্রস্রাব, পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বাহির হইলে। (৩) শরীরের কোন জায়গা দিয়া পুঁজ বা রক্ত বাহির হইয়া গড়াইয়া পরিলে। (৪) কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়া ঘুমাইলে। (৫) মুখ ভরিয়া বমি করলে। (৬) শব্দ করিয়া নামাজের মধ্যে হাসিলে। (৭) পাগল বা মাতাল হলে। উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি আপনার সাথে ঘটে থাকে তাহলে আপনার ওযু নষ্ট কিংবা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় আপনাকে আবার ওযু করে নিতে হবে।
ওযুর মুস্তাহাব
ওযু করার ক্ষেত্রে আমাদের ওযুর মুস্তাহাব সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। নিম্নে ওযুর মুস্তাহাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ওযুর আটটি মুস্তাহাব হলো- (১) ডান দিক থেকে শুরু করা। (২) ঘাড় মাসেহ্ করা। (৩) অপরের সাহায্য না নেওয়া। (৪) কেবলামুখী হইয়া বসা। (৫) পাকও উঁচু স্থানে বসা। (৬) নিয়ত করা। (৭) সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ্ করা, (৮) ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
ওযুর মাকরুহ্
ওযুর ফরজ ও সুন্নত সম্পর্কে মোটামুটি আমাদের সবারই একটা ধারণা আছে। তবে আমরা বেশিরভাগ লোকেরা ওযুর মাকরুহ্ সম্পর্কে অবগত নই। তাই এখানে ওযুর মাকরুহ্ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ওযুর মাকরুহ্ বলতে বুঝায় ওযুর সময় যে কাজগুলো করা যাবে না। চারটি মাকরুহ্ হলো- (১) নাপাক স্থানে বসা, (২) ডান হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা, (৩) পার্থিব কথাবার্তা বলা (৪) সুন্নত তরিকার বিপরীতভাবে ওযু করা। তাই আমরা ওযু করার সময় কখনই এই চারটি কাজ করবো না।
আরো দেখুনঃ- ওযু, ওযুর দোয়া, ওযুর ফরজ, সুন্নত ও ফজিলত
ওযুর মাসয়ালা
(১) একবার ওযু করিলে ওই ওযু ভঙ্গ না হইলে তাহা দ্বারা যত ওয়াক্ত নামাজ পড়িতে পারিবে। তবে প্রতি ওয়াক্তে নতুন ওযু করা ভালো।
(২) উত্তম রূপে গোসল করিবার পরে ওযু ভাঙ্গার কোন কারণ না ঘটিলে ওই অবস্থায় ওযু না করিয়া নামাজ পড়া যাইবে।
(৩) গোসলের আগে ওযু করিলে গোসলের পরে ওযু না করিলেও চলে।
(৪) শরীরের কোন ক্ষতস্থান হইতে রক্ত বা পুজ বাহির হইয়া যদি গড়াইয়া না যায়, তবে ওযু নষ্ট হবে না। কিন্তু গড়াইয়া গেলেই ওযু নষ্ট হইবে।
(৫) কোন ক্ষতস্থান হইতে পোকা বাহির হলে ওযু নষ্ট হয় না।
(৬) কোন বয়স্ক লোক নামাজের মধ্যে উচ্চ শব্দে হাসিলে ওযু ভাঙ্গিয়া যাইবে।
(৭) নাকের ভিতর সর্দি এমনভাবে শুকাইয়া থাকে যে ওযু করিবার সময় উহার মধ্যে পানি ঢুকে না, তবে অজু হবে না।
(৮) কোন কিছুর সাথে ঠেস দিয়া ঘুমাইলে ওযু ভঙ্গ হইয়া যাইবে।
(৯) কোন মহিলার ওযু করার পর মাথার কাপড় পড়ে গেলে বা ওযু করার পর কোন পুরুষে দেখিয়া ফেলিলে ওযু ভঙ্গ হইবে না।
(১০) মেয়েদের হাতে পায় নক মালিশ থাকা অবস্থায় ওযু গোসল হইবে না। ওই অবস্থায় নামাজ পড়িলে নামাজও হইবে না।
(১১) মাসের আইস শরীরের কোন স্থানে শুকাইয়া থাকলে ওযু, গোসল হইবে না।
(১২) কাহারো ফোড়া বা জখমাগদির কারনে ওযুর স্থানে পট্টি বাধা থাকিলে উহা খুলিয়া ওযু করিবে। আর যদি পানি লাগলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে ভিসা হাতে পটতির ওপর দিয়ে মাসেও করিলে চলিবে।
ওযু শেষের আমল
ওযু শেষ করিয়া আকাশের দিকে তাকাইয়া যে কালেমা শাহাদত পড়বে, হাদীস শরীফে আছে তাহার জন্য বেহেশতের আটটি দরজা খোলা থাকবে।
বাংলা উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন।
বাংলা উচ্চারণঃ তালাবুল ইলমি ফারীদাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিও অমুসলিমাতিন।
বাংলা অর্থঃ জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ এবং নারীর প্রতি ফরজ। বুযরগানেরা বলেন এই হাদিসের দ্বারা প্রকৃতপক্ষে দ্বীনি ইলম বা কুরআনের কথা বলা হইয়াছে। কারণ কোরআন শরীফ বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে জীবন বিধান বা সংবিধান হিসেবে মনোনয়ন করিয়া পাঠাইয়াছেন। সুতরাং আল্লাহ এবং রাসূলকে জানিতে ও মানিতে হইলে এবং ইহকাল ও পরকালের সুখ ও শান্তি পাইতে হইলে কোরআন পাকের শিক্ষা গ্রহণ করিতে হইবে। তার সাথে সাথে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ নীতিকে গ্রহণ করিয়া জীবন পরিচালিত করিতে হইবে।
রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন-
১.বাংলা উচ্চারণঃ খাইরুকুম মান তাআল্লামাল কুরআনা অআল্লামাহু।
বাংলা অর্থঃ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কুরআন শরীফ শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।
২. বাংলা উচ্চারণঃ আফদালুল ইবাদাতিত্ তিলাওয়াতুল কুরআন।
বাংলা অর্থঃ কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম ইবাদত।
৩. বাংলা উচ্চারণঃ মিফতাহুল জান্নাতিছ ছালাতু।
বাংলা অর্থঃ নামাজই বেহেস্তের চাবি।
৪. বাংলা উচ্চারণঃ আউয়্যালু মা ইউহাসাবু বিহিল আবদু ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতিছ ছালাতু।
বাংলা অর্থঃ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নিকাশ লওয়া হইবে।
৫. বাংলা উচ্চারণঃ লা ইয়ারহামুল্লাহু মান লা ইয়ারহামুন নাসা।
বাংলা অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের উপর রহম করে না।
৬. বাংলা উচ্চারণঃ আল মুসলিমু মান সালিমাল মুসলিমুনা মিল্ লিসানিহি ওয়া ইয়াদিহি।
বাংলা অর্থঃ যাহার হাত এবং মুখ দ্বারা অন্য মুসলমান কষ্ট না পায় সেই প্রকৃত মুসলমান।
৭. বাংলা উচ্চারণঃ লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা জাসাদুন গুযিয়া বিল হারামি।
বাংলা অর্থঃ হারাম মাল ভক্ষণ কারীর দেহ বেহেশতে প্রবেশ করিবেনা।
৮. বাংলা উচ্চারণঃ লা ইয়াদখুলুল মালাইকাতু বাইতান ফিহি কালবুন আও তাছাবিরুন।
বাংলা অর্থঃ যে সকল ঘরে কুকুর এবং অন্য জীব জানোয়ারের ছবি থাকে ওই সকল ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা আমাদের সাইটটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ। আজকের এই পোস্টটিতে আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওযু ভঙ্গের কারণ, ওযুর মুস্তাহাব, মাকরুহ্, মাসালা ও আমল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছিলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আজকের আলোচনা থেকে যা কিছু শিখতে পেরেছেন সবই আমল করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুক। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের এই পোস্টটি শেষ করলাম।