যার জন্ম আছে তাকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এটি জীবনের সবচেয়ে চরম সত্য। মৃত্যুই জীবনের শেষ পরিণতি। মৃত্যুর নিয়ে বা মরণ নিয়ে উক্তি, কবিতা, হাদিস, স্ট্যাটাস ও কিছু কথা আমাদের আজকের এই পোস্টে আমরা তুলে ধরব। অনেকেই ইন্টারনেটে মরণ নিয়ে উক্তি, কবিতা, হাদিস, স্ট্যাটাস ইত্যাদি লিখে সার্চ করে থাকে। তাই তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্ট।

আপনারা যারা মরণ নিয়ে উক্তি, কবিতা, হাদিস, স্ট্যাটাস পেতে চান তারা অবশ্যই আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালোভাবে পড়ে নিন। একদিন সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুকে ঠেকনার মতো ক্ষমতা কোন মানুষের নেই। যারা পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন তারা এখন আর নেই, আর আমরা যারা পৃথিবীতে বেঁচে আছি তারাও এক সময় থাকবো না। এটাই পৃথিবীর নীতি। চলুন এবার দেখেনিই মরন নিয়ে উক্তি, কবিতা, হাদিস, স্ট্যাটাস ও কিছু কথা।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমরা যে কোন কথা অবলম্বন করতে পারি। কিন্তু আমরা মরণের কথা একটু সময়ের জন্যও চিন্তা করি না। আমরা যদি মরনের কথা চিন্তা করি তাহলে আর আমরা কখনোই খারাপ কাজ করতে পারবো না। কিন্তু সেই সময়টুকুও আমাদের নেই। কারন আমরা দুনিয়াতে বেঁচে থাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই করি। একটু ভালো থাকার জন্য নিজের স্বার্থকে আমরা হাসিল করার জন্য, অপর ব্যক্তিকে অপমান করতেও দ্বিধাবোধ করি না।

মরণ নিয়ে উক্তি 

১.” মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই,
এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২.” মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া কি মানুষ হওয়া বলে।”
-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৩.” এমন সৌভাগ্যবান কেউ নেই, যাকে দুঃখ এবং মৃত্যু স্পর্শ করে না।”
-ইউরিপাইডস

৪.” মৃত্যু অবশ্যই ব্যর্থতা নয়। মৃত্যু স্বাভাবিক। মৃত্যু শত্রু হতে পারে তবে এটি প্রাকৃতিক বিষয়ও।”
-অতুল গাওয়ান্দে
৫.” ওহে মৃত্যু! তুমি মোরে কি দেখাও ভয়, ও ভয়ে কম্পিত নয় আমার হৃদয়।”
-কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার
৬.” অনেকের জীবনে আনন্দ যেমন আকস্মিকভাবে আসে, মৃত্যুও তেমনি আকস্মিকভাবে আসে।”
-ওয়াল হুইটম্যান

৭.” জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নির হায়রে জীবন নদে?
-মাইকেল মধুসূদন দত্ত
৮.” মৃত্যু ধীরগতিতে আসুক অথবা দ্রুতগতিতেই আসুক অবশেষে সে আসবেই।”
-জন মারসটন
৯. মৃত্যু সবচেয়ে বড় ক্ষতি নয়, বড় ক্ষতি হয় তখন; যখন কেউ বেঁচে থেকেও মরে যায়।
-নরমান কাজিন্স

মরণ নিয়ে কবিতা 

মৃত্যুর ডাক
-রুবিনা মজুমদার

মৃত্যুর কাছে প্রতিটি মানুষ বড়ই অসহায়,
মৃত্যু যখন কাছে এসে বলে…
পৃথিবীর সব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে,
আমার কাছে আয় চলে আয়।

তবুও মানুষ ক্ষণিক জীবনের তরে
নতুন স্বপ্নগুলো করছে বপন,
পরাজিত হয়েও জীবন যুদ্ধে
গড়ছে আপন ভুবন।

নতুন বছর ফিরে ফিরে আসে,
আবার চলেও যায়,
সময়ের কাছে তবুও মানুষ
হয়ে পড়ে কেন এত অসহায়?

জীবনটা এত ক্ষণিকের কেন
কেউ কি বলতে পারো?
তবুও কারো কাছে এর
কোন উত্তর নেই যেন।

এই পৃথিবীর ক্ষণিকের মায়াডোরে,
আলো আর আধারের মাঝে-
কেউ করছেন নামাজ- কালাম
কেউ করছেন হজ্জ,
কেউবা আবার কালো টাকা গুণছেন
কেউবা হচ্ছেন জর্জ।

কেউ চালাচ্ছেন উড়োজাহাজ
কেউ বা মেশিন গান,
কেউ বা আবার কেড়ে নিচ্ছেন
কত অমূল্য প্রাণ।

কেউ রাজা হয়ে রাজ্য শাসন করেন
অসহায় প্রজারা কেন ধুঁকে-ধুকে মরেন?
কেউ পরে প্রতারণার ফাঁদে
একাকী বসে বসে নিরবে কাঁদেন।

কত জাদুকর জাদু দেখিয়ে
মানুষের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে
বিখ্যাত হচ্ছেন বিশ্বময়,
কত বিজ্ঞানী নীল আকাশ দিয়ে পাড়ি
চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্রকে করছেন জয়,
তবুও সব মানুষই একসময়
হয়ে পড়েন মৃত্যুর কাছে বড়ই অসহায়।

মরণ নিয়ে হাদিস 

১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চাপা পড়ে, গর্তে পড়ে, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও বিষাক্ত প্রাণির দংশনে মারা যাওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করতেন।
– (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
২. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে মুসলিমের অসিয়তযোগ্য কিছু সম্পদ আছে তার উচিত নয় সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না।
-(সহীহ বুখারী, হাদিস: ২৭৩৮)
৩. মুমিন অতীত ভুল ত্রুটি ও পাপের জন্য তাওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। পবিত্র কোরআনে মৃত্যুর আগে তাওবা না করাকে ’জুলুম’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ”যারা তাওবা করে না, তারা অবিচারকারী।”
– (সূরা হুজরাত, আয়াত: ১১)

৪. পাপ পরিহার এর মাধ্যমে মুমিন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের পাপ নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, বলুন! আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ।
– (সূরা আরাফ, আয়াত: ৩৩)
৫. মৃত্যুর প্রধান প্রস্তুতি হলো নিজেকে ভালো করে নিয়োজিত করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। মহানবী (সাঃ) বলেন, তোমরা নেক আমলের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের অংশ সদৃশ ফেতনায় পতিত হওয়ার আগেই।
– (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৩২৮)
৬. জীবন মাত্রই মৃত্যু অনিবার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদেরই স্পর্শ করবেই।
– (সূরা নিসা, আয়াত: ৭৮)

মরণ নিয়ে স্ট্যাটাস

১. মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়।
– সমসের মজুমদার
২. মানুষ প্রতিদিন তার মত মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে দেখে, কিন্তু নিজের মৃত্যুর কথাই ভুলে যায়।
-হযরত ওসমান (রাঃ)
৩. মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।
-মুনীর চৌধুরী

৪. ভীরুরা মরার আগে বারবার মরে, সাহসীরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে।
-উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
৫. জীবনকে যেমন, মৃত্যু কেউ তেমনি স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে হবে।
-শহীদুল্লাহ কায়সার
৬. আমরা জন্মাই অতৃপ্তি নিয়ে, মারাও যাই অতৃপ্তি নিয়ে।
-সাইরাস

৭. মৃত্যু নিয়ে আমি ভীত নই, কিন্তু মরার জন্য তাড়াও নেই আমার, তার আগে করার মতো অনেক কিছু আছে আমার।
-স্টিফেন হকিং
৮. মৃত্যুই আমাদের সবার গন্তব্য। কেউ কখনো এটা থেকে পালাতে পারেনি। এবং সেটাই হওয়া উচিত, কারণ মৃত্যু সম্ভবত জীবনের অন্যতম বড় আবিষ্কার। এটা জীবনে পরিবর্তনের এজেন্ট। এটা পুরনো কে ছেড়ে নতুনের জন্য জায়গা করে দেয়।
-স্টিভ জবস
৯. মৃত্যু এবং জীবন কিন্তু বিপরীত নয় বরং মৃত্যু হল জীবনের অংশ।
-হারুকি মুরাকামি

মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা 

জন্ম যদি হয় উপন্যাসের শুরু, মৃত্যু সেই উপন্যাসের শেষ পরিণতি। জন্মগ্রহণ করলে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কখন মৃত্যু হবে সেটিও কেউ বলতে পারবে না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এত সুন্দর করে সৃষ্টি করে আমাদের মাঝে প্রাণ দিয়ে মায়ের গর্ভে ধারণ করার পর পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ করে, সেই সৃষ্টিকর্তা আবার আমাদের থেকে প্রাণ কেড়ে নিয়ে মৃত্যুর পথে ধাবিত করে। মৃত্যুকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই।

এই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি যিনি, তারও মৃত্যুকে ঠেকানোর ক্ষমতা নেই। কেউ চিরকাল বেঁচে থাকবে না। সবাইকেই মৃত্যুর তিক্ততা অনুভব করতে হবে। মৃত্যুর কোন বয়স নেই, যে কোন বয়সেই মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে, এটি একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। তিনি ব্যতীত কেউ বলতে পারবেন না, কে কখন মৃত্যুবরণ করবেন। আজ যিনি বেঁচে আছেন, কাল তিনি লাশ হতে পারেন। তাই মৃত্যুকে আমাদের স্বীকার করতেই হবে।

যেহেতু আমাদের মৃত্যুবরণ করতেই হবে, সেহেতু আমরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবো। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের জন্য ও তার সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য আমরা তার ইবাদত করব। সবচেয়ে বড় ধর্ম হচ্ছে মানব ধর্ম। তাই আমরা মানুষের উপকার ব্যতীত মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করব না। এতে আমাদের নিজেরই ক্ষতি হবে। কারণ সৃষ্টিকর্তা সবই দেখছেন। সৃষ্টিকর্তার চোখ ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা কারোর নেই।

সম্মানিত পাঠক, আমাদের সাইটটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ। আজকের এই পোস্টটিতে আপনাদের মাঝে মরণ নিয়ে উক্তি, কবিতা, হাদিস, স্ট্যাটাস ও কিছু কথা তুলে ধরেছিলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। যতদিন আমরা বেঁচে থাকব সুপথে চলবো। সবাইকে তো একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে, তাই যতদিন বেঁচে থাকি আমরা যেন পাপের পথে না থেকে পুণ্যের পথে থাকি। সকালের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের এই পোস্টটি শেষ করলাম।