২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তাই এই অনুষ্ঠানগুলোতে অনেক সময় রচনা প্রতিযোগিতা দেওয়া হয়। অনেকেই ইন্টারনেটে স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব, প্রবন্ধ রচনা লিখে সার্চ করে থাকে। তাই আপনারা যাতে সহজেই এই স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব, প্রবন্ধ রচনাটি সহজে খুঁজে পান সেজন্য আজকের এই পোস্টটিতে আমরা স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব, প্রবন্ধ রচনাটি তুলে ধরেছি।
আপনারা যারা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন, সেখানে রচনা প্রতিযোগিতায় আপনাদের এই রচনাটি অনেক কাজে লাগবে। তাই আমরা আপনাদের জন্য এ রচনাটি পাঠ্য বই থেকে সংগ্রহ করে নিয়েছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্চ করে আপনারা সহজেই এই রচনাগুলি পেয়ে যাবেন, কারণ অনেক সময় পাঠ্য বই ক্রয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই হাতের কাছেই ফোন এবং ইন্টারনেটের সংযোগের মাধ্যমে আপনি অতি সহজেই বিভিন্ন রচনা পেয়ে যাবেন। চলুন রচনাটি দেখে নেয়া যাক।
স্বাধীনতা দিবস
ভূমিকা :
“সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবুও মাথা নোয়াবার নয়।”- ( সুকান্ত ভট্টাচার্য )
২৬ মার্চ ১৯৭১, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি দেশের নামের অন্তর্ভুক্তি ঘটে-বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস দিনটিকে ঘিরে রচিত হয়েছে। এদিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ স্বাধীনতা দিবসের মধ্যে প্রথমে যে কথা মনে পড়ে, তাহলে এদেশের অসংখ্য দেশ প্রেমিক শহীদের আত্মদান। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার মানুষ পাকিস্তান ও উপনিবেশিক স্বৈরশাসনের চব্বিশ বছরের গ্লানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছিল। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তে রাঙানো আমাদের স্বাধীনতার সূর্য। তাই এদেশের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস সবচাইতে গৌরবময় ও পবিত্রতম দিন। ২৬ মার্চ, আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস।
অনন্য ঘটনা :
‘শুধু ভিক্ষা করে কখনো স্বাধীনতা লাভ করা যায় না।
স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় শক্তি দিয়ে, সংগ্রাম করে।
স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয় রক্ত দিয়ে।’- ( নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু )
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশ্বের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। কোন জাতিকেই জন্মভূমির জন্য এমন ভাবে আত্মত্যাগ করতে হয়নি। তাই স্বাধীনতার ইতিহাসে বাঙালীরা এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে। সেই সূচনা শুধু বাংলাদেশের মানুষেরই নয়, বিশ্ব বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যেই এক অনন্য প্রেরণার উৎস। বাংলার কবি সংবাদই তো নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে, অর্থ দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার পতাকা এ দেশের শ্যামল ভূমিতে ওড়াতে সক্ষম হয়েছিল। এজন্য এদেশের মানুষকে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় সংগ্রাম করতে হয়েছে এক শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে। অবশেষে তারা সেই অকুতোভয় সংগ্রামে জয়ী হয়েছে। ফলে আমরা লাভ করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ- বাংলাদেশ।
উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য :
আমাদের জাতীয় জীবনে দিনটির প্রধান তাৎপর্য হলো-এ দিন সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুফতি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্কর। এ দিবসটি দারিদ্র, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। এদিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে ও বেদনায় মহীয়ান। প্রতিবছর গৌরবময় এই দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও স্বাদ আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বাস সভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা। এদিক থেকে এ দিনটি আমাদের আত্মসমালোচনার দিন, হিসেব মেলাবার দিন, আত্ম জিজ্ঞাসার দিন।
স্বাধীনতার স্বপ্ন ও বিরাজমান বাস্তবতা :
আমাদের এ কথা বলে গেলে চলবে না যে, সমগ্র দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগের ফলেই এই স্বাধীনতা লাভ সম্ভবপর হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ আমাদের দায়িত্ব, এক সমুদ্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের এই স্বাধীনতা সমাজের গুটিকয়েক মানুষের আরাম-আয়েশ নিশ্চিত করতে এটা হতে পারে না। কারণ আমাদের এই স্বাধীনতা জাতির রাজনীতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। এই আদর্শ গুলোর প্রকৃত রূপায়ণ নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, সাধারণ মানুষের জীবনে তা কতটুকু অর্থবহ হয়েছে এবং আমরা স্বাধীনতা- উত্তর এতগুলো বছর পরও কেন বাংলার অগণিত মানুষের দুঃখ- যাতনা, ব্যর্থতা- হতাশা, দারিদ্র থেকে মুক্তি দিতে পারিনি।
স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের করণীয় :
আজ আমাদের যুবকদের সুসংগঠিত করে সত্য এবং ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের যে আত্মত্যাগ ছিল, সমগ্র জাতি একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দেশ প্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে জীবন উৎসর্গ করেছিল, তা আবার পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে, তরুণদের জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা সচেতন হলে কোনরকম অন্যায় কুমন্ত্রণা তাদের বশীভূত করতে পারবেনা। সমাজে যতদিন অন্যায় অবিচার মাথা উঁচু করে থাকবে ততদিন যুব সমাজকে সুপথে আনা কষ্টকর। ধর্ম ও শিক্ষার আলো সরিয়ে দিয়ে তাদের সামনে থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে। রীতিমতো শরীরচর্চা এবং নানারকম খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। তাছাড়া যারাই সমাজের অপরাধ-কর্মে লিপ্ত হয় তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
যুবকরা এই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং জাতির কর্ণধার। তাদের মনে এর চেতনাবধ জাগিয়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশ প্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্ঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক শাসন ব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরব গাথা আর আত্মত্যাগের ইতিহাস ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে তুলে ধরা। যে আদর্শ, লক্ষ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তি কামিল আখলাক মানুষ তাদের তাজা প্রাণ দিয়েছে, শত সহস্র মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে সমাজ ও জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একাত্ম হতে হবে লক্ষ কোটি প্রাণ এক লক্ষে। তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হবে। শ্রদ্ধা জানানো হবে জাতির গৌরব মহান স্বাধীনতাকে।
’ আমার কন্ঠে তুমি ধ্বনি-অক্ষরে সুধা বর্ণমালা
তোমারি ভুলিতে স্বর্গ-আখরে ডাকতে শিখেছি মা !
চির স্বদেশ আমার মা-মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশ-
মাগো তোমার কোলে জীবন-মরণ স্বপ্ন অনিঃশেষ !’ (-প্রাকৃতজ টিটন )
উপসংহার :
আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা যেমন তাৎপর্য বহন করে, তেমনি লক্ষ লক্ষ ক্লিষ্ট ও আর্ত মানুষ যাতে জাতীয় পতাকাকে সমুন্নত রেখে নতুন জীবনকে পাথেয় করে নিজেদের গড়ার শপথ নিতে পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়। তাহলেই আমরা নতুন স্বপ্ন সম্ভাবনায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবো এবং দুঃখ-বেদনা ক্ষণকালের জন্য হলেও ভুলতে পারব। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি বটে, কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেই আমাদের স্বাধীনতার রূপ পূর্ণাঙ্গ হবে। তাই এই নতুন রাষ্ট্রকে নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বিতাড়িত করতে হবে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, বেকারত্ব, বুভুক্ষা ও দারিদ্র। তবেই না আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারব। তাই আসন সব রকম বিভেদ-বিচ্ছেদ ভুলে, হানাহানি সংঘাত ভুলে, সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হই।
সম্মানিত পাঠক, আমাদের সাইটটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ। আজকে আপনাদের জন্য স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস এর গুরুত্ব সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছিলাম। এই রচনাটি যেকোনো রচনা প্রতিযোগিতায় কিংবা স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় লিখতে পারবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের এই পোস্ট শেষ করলাম।